সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুহার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে দরিদ্র ও স্বল্পশিক্ষিত মায়েদের মধ্যে এই হার অনেক বেশি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, যেসব মায়ের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই বা কেবল প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মে ৪৮টি শিশুর মৃত্যু ঘটে। এর বিপরীতে, উচ্চশিক্ষিত মায়েদের ক্ষেত্রে এই হার ২২-এ নেমে আসে। এই পরিসংখ্যান মাতৃস্বাস্থ্যের প্রতি পর্যাপ্ত যত্নের অভাব এবং সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যের এক করুণ চিত্র তুলে ধরে। দ্য ডেইলি স্টার-এর প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, দেশের সার্বিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং বিশেষ করে গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার অপ্রাপ্যতা এই পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে দায়ী।
শিশু মৃত্যুহারের এই তারতম্য মূলত সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের ফল। দরিদ্র পরিবারগুলোতে গর্ভবতী মায়েদের পর্যাপ্ত পুষ্টি, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নিরাপদ প্রসবের সুযোগ সীমিত থাকে। শিক্ষার অভাব তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতাকেও প্রভাবিত করে। ফলে, মা ও শিশু উভয়েরই স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা এবং এর গুণগত মানের পার্থক্য ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বিদ্যমান স্বাস্থ্যগত বৈষম্যকে আরও প্রকট করে তুলছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ অপরিহার্য, যাতে প্রতিটি শিশু সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায় এবং প্রতিটি মা নিরাপদ মাতৃত্বের নিশ্চয়তা পান।
শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার বৃদ্ধিও গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন 'এইচআইভি/এইডস পরিস্থিতি প্রতিবেদন-২০২৫' অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশে ১,৮৯১ জন নতুন এইচআইভি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এটি পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় সংক্রমণের দ্রুত বৃদ্ধি নির্দেশ করে। এই ঊর্ধ্বগতি জনস্বাস্থ্য খাতের জন্য একটি নতুন ও গুরুতর চ্যালেঞ্জ। এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, পরীক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ সম্প্রসারণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্যথায়, এই সংক্রমণ দেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য খাতের এই সংকট মোকাবিলায় অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। শিশু মৃত্যুহার কমাতে মাতৃস্বাস্থ্য পরিচর্যার মান উন্নয়ন, গর্ভবতী মায়েদের জন্য পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং নিরাপদ প্রসবের সুযোগ বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসাথে, এইচআইভি সংক্রমণের বিস্তার রোধে ব্যাপক জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা, সহজলভ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা আবশ্যক। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকারের স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বেসরকারি খাতের সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন করা যেতে পারে। এই সমস্যাগুলো সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও সার্বিক জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।