বর্তমান প্রযুক্তি বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। গুগল, মাইক্রোসফটের মতো বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে গভীরভাবে একীভূত করছে। এর ধারাবাহিকতায়, গুগল সম্প্রতি তাদের অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল 'জেমিনি ৩' উন্মোচন করেছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধু গুগলই নয়, চীনের ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবাও একটি বিনামূল্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট চালু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাজারে তাদের উপস্থিতি জোরদার করেছে। এই ঘটনাগুলো বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত বিকাশ এবং বিভিন্ন শিল্পে এর প্রয়োগের ব্যাপকতাকেই তুলে ধরে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই দ্রুত অগ্রগতি আগামী দিনে আমাদের জীবনযাত্রা ও কাজের ধরনকে আমূল পরিবর্তন করবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব কেবল পণ্য উন্মোচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বিভিন্ন শিল্প ও খাতকে নতুন করে ঢেলে সাজাচ্ছে। ভবিষ্যৎ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল গ্রাহক পরিষেবা উন্নত করবে না, বরং তথ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং লেনদেন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি হিসেবেও কাজ করবে। মানবজমিন পত্রিকার এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে যে, ভবিষ্যতের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক ব্যবহার প্রয়োজন হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা কেবল আর্থিক খাত নয়, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং উৎপাদন খাতের মতো অন্যান্য ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঠিক ব্যবহার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ডিজিটাল রূপান্তরে সহায়ক হতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতির সাথে সাথে এর নীতিমালা এবং নৈতিক ব্যবহারের প্রশ্নটিও প্রকট হয়ে উঠছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং তথ্য গোপনীয়তা নিয়মাবলী পুনর্বিবেচনার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণের বৈশ্বিক প্রচেষ্টার একটি অংশ। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি এর সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবিলা করা। একইসাথে, উইকিপিডিয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংস্থাগুলোকে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা বন্ধ করতে এবং এর জন্য অর্থ প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে, যা তথ্য ব্যবহারের নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির অধিকার নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দায়িত্বশীল ব্যবহার এবং এর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামো তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।