বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির সবচেয়ে আলোচিত ও প্রভাবশালী ক্ষেত্র হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এই বিপ্লবের নেতৃত্ব দিচ্ছে ওপেনএআই, যা সম্প্রতি ফাস্ট কোম্পানির এমআইসি ২০২৩ তালিকায় শীর্ষস্থান অর্জন করে প্রযুক্তি জগতে নিজেদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থান প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রগুলোতেও এই বৈশ্বিক প্রবণতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা স্থান পাচ্ছে। ওপেনএআই-এর মতো সংস্থাগুলো প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মডেল তৈরি করছে এবং এর বিশাল পরিকাঠামো তৈরির জন্য মার্কিন সরকারের কাছে ঋণ সহায়তার আবেদনও করেছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণায় তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বিনিয়োগের মাত্রা নির্দেশ করে। এই অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কেবল একাই কাজ করছে না, বরং এটি কোয়ান্টাম ফিজিক্স এবং বায়োটেকনোলজির মতো অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাথে মিশে নতুন নতুন উদ্ভাবনের দ্বার খুলে দিচ্ছে। এই সংমিশ্রণ সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের জন্য অসীম সুযোগ তৈরি করছে, যা মানবজাতির জন্য অভূতপূর্ব সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করে। বিভিন্ন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মতামত দিচ্ছেন যে, এই তিন ক্ষেত্রের সমন্বয় আগামী দিনের প্রযুক্তিগত বিপ্লবের মূল ভিত্তি হবে। শিক্ষাব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করার ক্ষেত্রেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশ্বজুড়ে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্মাদনা একটি নতুন বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল সংকট তৈরি করছে বলেও ডেইলি স্টার-এর এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, যা এর ব্যাপক প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই দ্রুত অগ্রগতি একদিকে যেমন অপার সম্ভাবনা তৈরি করছে, তেমনি অন্যদিকে কিছু গভীর উদ্বেগ ও চ্যালেঞ্জও নিয়ে আসছে। নতুন প্রযুক্তির আগমনে মানবিক দক্ষতা দুর্বল হয়ে পড়ার ভয় দীর্ঘদিনের। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসও লেখালেখির প্রচলনে মানুষের স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। আজকের দিনে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক ব্যবহার মানব মস্তিষ্কের কিছু নির্দিষ্ট কার্যক্ষমতা হ্রাস করতে পারে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমবর্ধমান চাহিদা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে চাপ সৃষ্টি করছে, যা বিভিন্ন শিল্পের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে। এই প্রযুক্তিকে দায়িত্বশীলভাবে এবং মানবজাতির কল্যাণে ব্যবহারের জন্য গবেষণা ও নীতি নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি, যাতে এর নেতিবাচক প্রভাবগুলো মোকাবিলা করা যায়।