বড়দিনের আগের রাতে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের টংগঝিরি ত্রিপুরা পাড়ায় ১৭টি ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন জমি দখল ও চাঁদাবাজি থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। প্রশাসনের পাশাপাশি দেশের গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমেও এই ঘটনার পেছনে জমি দখল কেন্দ্রিক বিরোধ ও কথিত "এসপি বাগান" এর সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত মার্জেল ত্রিপুরা ও অরাতি ত্রিপুরার মতে, কিছুদিন আগে কয়েকজন ব্যক্তি তাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেছিল এবং হুমকি দিয়েছিল যে চাঁদা না দিলে ঘর পুড়িয়ে দেবে। তাদের অভিযোগ, ওই হুমকিদাতারাই মঙ্গলবার রাতে ঘরগুলোতে আগুন দেয়।
পাড়া প্রধান পাইসাপ্রু ত্রিপুরার দাবি, কিছু পাহাড়ি ও বাঙালি মিলে এর আগে অস্ত্রসহ চাঁদাবাজি করতে এসেছিল। এদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছিল।
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে "এসপি বাগান" নিয়ে। স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. জামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, সরকারি খাস জমিতে গড়ে ওঠা এই বাগানটির নাম এক সময় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সঙ্গে জড়িয়ে প্রচারিত হয়।
তিনি আরও জানান, স্থানীয়ভাবে প্রচলিত রয়েছে যে বাগানটি বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি। যদিও বাগানটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি জানিয়েছেন, এটি কোনো জেলার একজন এসপির নির্দেশনায় গড়ে তোলা হয়েছে।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ছয়জন কর্মকর্তার সঙ্গে বেনজীর আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এরপর তার নামে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এই ঘটনার সঙ্গেও তার নাম সম্পৃক্ত হওয়ায় স্থানীয়রা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বেশ কিছু নাম গণমাধ্যমে উল্লেখ করেছেন, যাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রুপায়ন দেব জানিয়েছেন, জমিটি সরকারি খাস জমি। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের একটি পক্ষ ৭-৮ মাস আগে সেখানে বসতি স্থাপন করেছিল। তবে জমি দখল নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ এই অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কারণ হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অপরাধীদের গ্রেফতারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাময়িক সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
সরকারি খাস জমি এবং এসপি বাগান নিয়ে ওঠা প্রশ্নগুলো তদন্তের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রশাসন বলছে, অগ্নিসংযোগে জড়িতদের শনাক্ত করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বান্দরবানের লামায় ত্রিপুরা পাড়ায় অগ্নিসংযোগ: এসপি বাগান ও বেনজীর আহমেদের সম্পৃক্ততার প্রশ্ন