বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি

বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি

বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান চাপ

সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি দেশের অর্থনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের ওপর এই বর্ধিত চাপ দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

এই পরিস্থিতি দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। একদিকে যেমন বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পে বিদেশি ঋণের ব্যবহার বাড়ছে, অন্যদিকে তেমনি বৈশ্বিক সুদের হার বৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এই পরিশোধের চাপকে আরও তীব্র করে তুলেছে।

কারণ ও সম্ভাব্য প্রভাব

এই উদ্বেগজনক বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। গত এক দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে, বিশেষ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং যোগাযোগ খাতে, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পগুলো দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, এখন সেগুলোর কিস্তি পরিশোধের সময় হওয়ায় চাপ বাড়ছে। এছাড়া, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিশ্ববাজারে সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ঋণের বোঝা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

এই বর্ধিত ঋণের চাপ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। রিজার্ভ কমে গেলে আমদানি ব্যয় মেটানো কঠিন হয়ে পড়ে এবং টাকার মান আরও দুর্বল হতে পারে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলবে। বেসরকারি খাতের ঋণ পরিশোধের চাপও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে মন্দা সৃষ্টি করতে পারে।

ভবিষ্যৎ ঝুঁকি ও করণীয়

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে বাংলাদেশ একটি ঋণ ফাঁদে পড়তে পারে, যা শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি তৈরি না করলেও দেশের অর্থনৈতিক গতিকে শ্লথ করে দেবে। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অপ্রয়োজনীয় বা কম অগ্রাধিকারের প্রকল্পগুলোতে বিদেশি ঋণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা এবং বিদ্যমান ঋণের শর্তাবলি পুনর্বিবেচনার চেষ্টা করা যেতে পারে।

এছাড়াও, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং প্রবাসী আয় প্রবাহ বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে, যাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হয়। নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখাও জরুরি। দেশের আর্থিক খাতকে আরও শক্তিশালী ও সুসংহত করার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। মানবজমিন পত্রিকার এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সরকারের সঠিক নীতি ও সময়োপযোগী পদক্ষেপই পারে এই সংকট থেকে দেশকে রক্ষা করতে।

Share this article:

সর্বশেষ খবর