ব্রাজিলের বেলেমে অনুষ্ঠিত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন COP30-এর ভেন্যুতে মঙ্গলবার আদিবাসী বিক্ষোভকারীরা জোরপূর্বক প্রবেশ করে নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিবিসি বাংলার খবর অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী ভূমির সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবিতে এই প্রতিবাদ সংগঠিত হয়। বিক্ষোভকারীরা বিশ্বনেতাদের প্রতি জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায়। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে আদিবাসীদের ভূমি ও পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে, যা তাদের জীবন-জীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এই ঘটনার মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের সংগ্রাম আবারও বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলনগুলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও এর ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আলোচনা এবং কার্যকর নীতি প্রণয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু COP30-এর মতো সম্মেলনে এমন বিক্ষোভ এটাই প্রমাণ করে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার জনগোষ্ঠীর কাছে বর্তমান পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট বলে মনে হচ্ছে না। বিজ্ঞানীরা বারবার সতর্ক করছেন যে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে দ্রুত ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ না নিলে পৃথিবী এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হবে। কার্বন নিঃসরণ কমানো, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রার প্রতি গুরুত্বারোপ করা এখন সময়ের দাবি। এই সংকট কেবল প্রাকৃতিক নয়, এটি মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারেরও প্রশ্ন।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সম্প্রতি প্রকাশিত লং-টার্ম ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স (CRI)-এ বাংলাদেশকে ১৩তম অবস্থানে রাখা হয়েছে, যা দেশের জলবায়ু-সম্পর্কিত ঝুঁকির ধারাবাহিক দুর্বলতাকেই নির্দেশ করে। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য সম্পদ এবং জনজীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে COP30 সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কার্যকর বৈশ্বিক সহযোগিতা ছাড়া এই বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব।
জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় শুধু প্রতিবাদই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সম্মিলিত উদ্যোগ। উন্নত দেশগুলোকে তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে হবে। জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ, অভিযোজন কৌশল বাস্তবায়ন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো নিজস্ব উদ্যোগে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও, বৈশ্বিক তহবিল এবং কারিগরি সহায়তা ছাড়া এর ব্যাপকতা ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মোকাবিলা করা কঠিন। COP30 সম্মেলন থেকে একটি সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর রোডম্যাপ আশা করা হচ্ছে যা পৃথিবীকে একটি টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।