সম্প্রতি বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। গত এক বছরে এই পরিশোধের হার প্রায় ৬১৭ শতাংশ বেড়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। এটি দেশের অর্থনীতির ওপর একটি বড় চাপ সৃষ্টি করছে, কারণ রপ্তানি আয় সেই হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি সরকারের জন্য নতুন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে, যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অর্থায়নেও প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজের জন্য নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় হওয়ায় এই চাপ বেড়েছে। এই দ্রুত বৃদ্ধি দেশের দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করছে এবং এর সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের ঋণের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সতর্কবার্তা দিয়েছে। আইএমএফের নির্ধারিত 'সতর্কতা স্তর' বাংলাদেশ অতিক্রম করেছে, যদিও ঝুঁকির মাত্রা এখনো 'মধ্যম' পর্যায়ে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এই সতর্কবার্তা ইঙ্গিত দেয় যে, দেশের অর্থনীতিকে আরও সতর্কভাবে পরিচালনা করতে হবে এবং ঋণের বোঝা কমাতে কার্যকর কৌশল অবলম্বন করতে হবে। দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার তথ্যমতে, আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ রাখছে এবং বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপের পরামর্শ দিচ্ছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন নীতিগত পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে, যাতে ঋণ পরিশোধের চাপ কমানো যায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ স্থিতিশীল থাকে। আইএমএফের পরামর্শ মেনে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং অপচয় রোধ করা এখন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের মন্দা পরিস্থিতি আরও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। পোশাক খাত, যা দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস, এখনও নিম্নমূল্যের সেলাই লাইনে সীমাবদ্ধ রয়েছে, যেখানে ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো উচ্চমূল্যের পণ্য রপ্তানিতে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রপ্তানি আয়ে এই ধীরগতি ঋণের বোঝা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এই সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু নীতিগত পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন, ব্যাংকারদের জন্য প্রণোদনা বোনাসের নিয়মাবলী কঠোর করা হয়েছে, যাতে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আসে। এছাড়াও, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে, দীর্ঘমেয়াদী টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা এখন সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।