বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে হ্রাস করেছে, ফলে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতিতে সীমিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে বেগ পেতে বাধ্য করছে। এই পরিস্থিতি একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে এবং সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করছে।
অর্থনৈতিক সংকটের এই সময়ে বাংলাদেশের উচ্চ মূল্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির সিদ্ধান্ত জনমনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যেখানে রাশিয়া থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে গম আমদানির সুযোগ ছিল, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বাজার রক্ষা করতে এই উচ্চ মূল্যের গম কেনার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। যুগান্তর পত্রিকার খবর অনুযায়ী, এই পদক্ষেপ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে গমের দাম এবং ফলস্বরূপ আটা ও অন্যান্য বেকারি পণ্যের মূল্যকে প্রভাবিত করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ ভোক্তাদের ওপরই বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। এমন সিদ্ধান্ত দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ওপরও চাপ বাড়াতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রচেষ্টাকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে।
বাংলাদেশ বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা আমদানি-নির্ভর অর্থনীতির জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। এই সংকটকালে উচ্চ মূল্যে পণ্য আমদানি দেশের অর্থনীতিতে আরও চাপ সৃষ্টি করছে। সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার অভাবে এই পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং অপ্রয়োজনীয় আমদানি হ্রাস করে রিজার্ভের ওপর চাপ কমানো জরুরি। এছাড়া, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতাও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা সামগ্রিক পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে।