বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উদ্বেগ: বৈদেশিক ঋণের চাপ ও মূল্যস্ফীতির প্রভাব

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উদ্বেগ: বৈদেশিক ঋণের চাপ ও মূল্যস্ফীতির প্রভাব

বৈদেশিক ঋণের ক্রমবর্ধমান বোঝা

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের তীব্র চাপের সম্মুখীন। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের হার গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এই ক্রমবর্ধমান ঋণ পরিশোধের চাপ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিকে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চাপ মোকাবিলায় রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমানোর মতো পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও জনজীবনে প্রভাব

বৈদেশিক ঋণের পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জীবনে ব্যাপক দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। সীমিত রিজার্ভ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। যদিও ২০২৬ সালের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসবে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতি প্রায় ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে, তবে বর্তমান পরিস্থিতি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল।

ব্যাংকিং খাতের সংকট: খেলাপি ঋণ ও নিয়ন্ত্রণ

দেশের ব্যাংকিং খাতও বর্তমানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে, ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার খবর উদ্বেগজনক। এই বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের সুশাসন এবং আর্থিক স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক কর্মকর্তাদের বোনাস প্রদানের ক্ষেত্রে কঠোর শর্ত আরোপ করেছে। নতুন নিয়মানুসারে, ব্যাংকগুলো তাদের অর্জিত মুনাফা থেকে বোনাস দিতে পারবে, যা আগে পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকেও দেওয়া যেত। এই পদক্ষেপ ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার একটি প্রচেষ্টা হলেও, খেলাপি ঋণের সমস্যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Share this article:

সর্বশেষ খবর