দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দুই দেশ ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক বন্যায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ১,৫০০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের কারণে অসংখ্য ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য, যা পরিস্থিতিকে আরও মর্মান্তিক করে তুলেছে। উদ্ধারকর্মীরা দুর্গম এলাকায় পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছেন, ফলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চললেও, নতুন করে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাসের কারণে জনমনে আতঙ্ক বাড়ছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, আগামী দিনগুলোতে আরও বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এবং মৃতের সংখ্যাও বাড়তে পারে। এই বিপর্যয়ের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। বিবিসি বাংলাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে মৌসুমি বায়ুর আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে অপ্রত্যাশিত ও অতিবৃষ্টির ঘটনা বাড়ছে, যা ঘন ঘন এমন ভয়াবহ বন্যার কারণ হচ্ছে। দুর্বল অবকাঠামো ও অপরিকল্পিত নগরায়নও এই দুর্যোগের প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কার এই ভয়াবহ বন্যা কেবল স্থানীয় সমস্যা নয়, এটি পুরো অঞ্চলের জন্য একটি সতর্কবার্তা। বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের অনেক দেশই জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই বন্যা খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জল ও স্যানিটেশনের অভাবে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ত্রাণ ও সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এলেও, দুর্যোগের ব্যাপকতা এতটাই বেশি যে তা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই ঘটনা আবারও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।