বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর বড় একটি সদরদপ্তর দখলের দাবি করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। সম্প্রতি মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে চলে যাওয়ার পর, এই দখলের ঘটনা ঘটে, যা মিয়ানমারের জান্তা সরকারের দ্বিতীয় আঞ্চলিক কমান্ডের পতনের ইঙ্গিত দেয়।
শুক্রবার রাতে দেয়া এক বিবৃতিতে, আরাকান আর্মি জানায় যে, গত দুই সপ্তাহ ধরে চলা তুমুল লড়াইয়ের পর, তারা পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডটি দখল করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, মিয়ানমারের সামরিক সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
২০২১ সালে মিয়ানমারে বেসামরিক সরকার উৎখাত করে সামরিক জান্তা ক্ষমতায় আসে এবং এর পর থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ ও সশস্ত্র বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়। আরাকান আর্মি, যা থ্রি বাদারহুড অ্যালায়েন্সের অংশ, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ব্যাপক হামলা চালিয়ে আসছে, এবং এখন পর্যন্ত তারা চীন সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
গত অগাস্টে এই জোট মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাসিও দখল করে, যা মিয়ানমারের ইতিহাসে প্রথম কোনো আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডের পতন ঘটায়। রাখাইন, যা বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী একটি দরিদ্র অঞ্চল, রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রধান আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। এখানে অফশোর গ্যাসের রিজার্ভ এবং একটি অর্থনৈতিক জোনও রয়েছে, যা কিয়াকপু এলাকায় অবস্থিত।
আরাকান আর্মি গত নভেম্বরে জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভেঙে রাখাইনে আক্রমণ শুরু করে এবং তারপর থেকে একের পর এক জয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে, কিছু রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী অভিযোগ করেছেন যে, উত্তর রাখাইনে অভিযান চলাকালে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদেরও টার্গেট করেছে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
আরাকান আর্মি ২০০৯ সালে কাচিন ইন্ডিপেনডেন্ট আর্মির (কেআইএ) সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং তাদের লক্ষ্য একটি সার্বভৌম আরাকান রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। ২০১৫ সালের পর থেকে তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে এবং বর্তমানে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকা একে একে বিস্তৃত হচ্ছে। ২০২৩ সালে তারা দাবি করে, রাখাইন রাজ্যের ৬০ শতাংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সামরিক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রোহিঙ্গা সমস্যা ও সীমান্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
রাখাইনে আরাকান আর্মির সেনা সদরদপ্তর দখল, জান্তার দ্বিতীয় আঞ্চলিক কমান্ড পতন