সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই রায়কে ঘিরে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জবাবদিহিতার প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানানো হলেও, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ করেছে যে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই মৃত্যুদণ্ডের রায় এমন একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এসেছে যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের মতে, বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রথম আলো পত্রিকার খবর অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মহলের এই প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর একটি কড়া নজরদারির ইঙ্গিত দেয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা এই রায়ের পরবর্তী প্রভাব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের পর দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। রাজধানী ঢাকা জুড়ে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল হামলার এক নতুন ঢেউ। যুগান্তর সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন স্থানে একাধিক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে এবং কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। এই সহিংসতা মূলত রায়ের প্রতিবাদে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এই রায় প্রমাণ করে যে, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। তবে, এই রায়ের পর চলমান সহিংসতা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর বাংলাদেশ সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কামালকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। দ্য ডেইলি স্টার-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে এই দুই নেতাকে হস্তান্তরের অনুরোধ করেছে। এই পদক্ষেপ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে এবং ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে এর প্রভাব নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের পরবর্তী রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল হলে তা দেশের আইনি ও রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। অন্যদিকে, ভারতের সিদ্ধান্ত দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হবে।