বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা এখন অভূতপূর্ব গতিতে এগিয়ে চলেছে। ৫জি প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি) এবং স্মার্ট সিটি ধারণার মতো উদ্ভাবনগুলো শিল্প, ব্যবসা ও দৈনন্দিন জীবনকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। এআই এখন কেবল টেক্সট বা ভাষাতেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি দৃষ্টিশক্তি এবং মানব-যন্ত্র সহযোগিতার ক্ষেত্রেও বিপ্লব আনছে। আগামী দিনে চালকবিহীন গাড়ির ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং এআই-এর বহুমুখী ব্যবহার বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এই দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিগত ল্যান্ডস্কেপ প্রতিটি দেশকে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে, নতুন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।
বৈশ্বিক প্রযুক্তির এই দ্রুত গতির সাথে তাল মেলাতে বাংলাদেশকেও নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৫জি, স্মার্ট সিটি এবং আইওটি-এর মতো আধুনিক প্রযুক্তির সাথে মানিয়ে চলা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যেমনটি দ্য ডেইলি স্টার-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় 'টেলিকম নিউ লাইসেন্সিং পলিসি ২০২৫' (টিএনএলপি ২০২৫) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই নীতিমালার লক্ষ্য হলো সাশ্রয়ী মূল্যে প্রযুক্তি সহজলভ্য করা, সব লাইসেন্স স্তরে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করা, নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া সরলীকরণ করা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। এর মাধ্যমে দেশের প্রযুক্তি খাতকে আরও গতিশীল করার প্রচেষ্টা চলছে।
প্রযুক্তির এই আধুনিক যুগে টিকে থাকতে হলে উদ্ভাবনের বিকল্প নেই। ছোট ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) এবং উদ্যোক্তাদের জন্য উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। এটি সম্ভব হয় যখন একটি প্রতিষ্ঠান দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এসএমই পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ, ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কিং সহজ করা এবং উদ্যোক্তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। প্রথম আলো-তে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, একটি উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক মডেলের জন্য ছোট পরিসরে শুরু করা এবং ধীরে ধীরে এর পরিধি বাড়ানো উচিত। সরকার ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই খাত আরও শক্তিশালী হতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য প্রযুক্তির এই বৈশ্বিক অগ্রযাত্রার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদের ভবিষ্যৎ পথ তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৫জি, এআই এবং আইওটি-এর মতো প্রযুক্তিগুলোকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী নীতি, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আধুনিকীকরণ এবং উদ্ভাবনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা অপরিহার্য। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করতে হবে। সামগ্রিকভাবে, একটি সমন্বিত ও কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রযুক্তির এই ঢেউকে নিজেদের অগ্রগতির সোপান হিসেবে ব্যবহার করতে পারে এবং একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।