যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য পাল্টা শুল্ক: বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ

যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য পাল্টা শুল্ক: বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ

মার্কিন পাল্টা শুল্কের হুমকি ও বাংলাদেশের উদ্বেগ

বাংলাদেশের রপ্তানি খাত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এক নতুন অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানির উপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়টি সামনে এসেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে পোশাক শিল্প, যা বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস, এই শুল্কের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির অন্যতম বৃহৎ বাজার হওয়ায়, এমন উচ্চ শুল্ক কার্যকর হলে তা দেশের সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি মহলে এই নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, কারণ এটি দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে।

আলোচনার শেষ পর্ব: শুল্ক হ্রাসের প্রচেষ্টা

এই গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। জানা গেছে, শুল্কের হার ১০-২০ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাথে বাংলাদেশের তৃতীয় ও চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে। এই আলোচনায় অংশ নিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই আলোচনা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ফলাফলই নির্ধারণ করবে আগামী দিনগুলোতে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশাধিকার কতটা সহজ বা কঠিন হবে। সরকার আশা করছে, আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করা সম্ভব হবে যা দেশের রপ্তানি খাতকে সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।

রপ্তানি খাতের উপর সম্ভাব্য প্রভাব ও প্রতিযোগিতা

যদি যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করে, তবে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতকে এক কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। বিশেষ করে, পোশাক শিল্পের পণ্যগুলির দাম মার্কিন বাজারে অন্য দেশগুলির তুলনায় অনেক বেশি হয়ে যাবে, যা ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের পণ্যের আকর্ষণ কমিয়ে দেবে। দ্য ডেইলি স্টার সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৫৮ শতাংশ এবং পোশাক রপ্তানির ৬৪ শতাংশের বেশি অংশীদার। তবে, মার্কিন বাজারও বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য। এই শুল্কের ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ কৌশল ও বাজার বহুমুখীকরণ

মার্কিন শুল্কের সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো রপ্তানি বাজার বহুমুখীকরণ। শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর নির্ভর না করে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করা জরুরি। পাশাপাশি, পণ্যের মান উন্নয়ন এবং উৎপাদন খরচ কমানোর উপরও জোর দিতে হবে যাতে কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যেও টিকে থাকা সম্ভব হয়। সরকারের উচিত হবে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে মার্কিন প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক জোরদার করা এবং শুল্কমুক্ত সুবিধা বা বিশেষ বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা চালিয়ে যাওয়া। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য সুরক্ষা নীতির প্রবণতা বাড়ছে, তাই বাংলাদেশকে নিজেদের রপ্তানি খাতকে আরও স্থিতিশীল করতে দূরদর্শী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

Share this article:

সর্বশেষ খবর