জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, বাল্যবিবাহের কারণে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই বিশাল অঙ্কের ক্ষতি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে। ইউনিসেফের এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা নিয়ে এসেছে, যেখানে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারি বিনিয়োগের মাত্রা 'আশঙ্কাজনকভাবে কম' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় দৈনিক 'দ্য ডেইলি স্টার'-এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই গুরুতর সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
বাল্যবিবাহ কেবল একটি সামাজিক সমস্যা নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথেও একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। ইউনিসেফের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েরা প্রায়শই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়, যা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত করে। এর ফলে তারা দেশের শ্রমবাজারে পূর্ণাঙ্গ অবদান রাখতে সক্ষম হয় না। উপরন্তু, অল্প বয়সে মা হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, যা চিকিৎসা ব্যয় বাড়ায় এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এই চক্রাকার বাল্যবিবাহ দেশের মানবিক ও অর্থনৈতিক উভয় মূলধনকে দুর্বল করে তোলে, যা দারিদ্র্য বিমোচন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করে।
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বাংলাদেশের সরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ অত্যন্ত অপ্রতুল। অথচ, এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং সামাজিক সূচকগুলোতেও উন্নতি আসবে। আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে ইউনিসেফ বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের প্রতি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধমূলক কর্মসূচিতে অর্থায়ন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, জীবনমুখী দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান এবং বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি। বিশ্বব্যাপী বাল্যবিবাহ একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ, যা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।