প্রযুক্তি জগতে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। এই খাতের অগ্রদূত ওপেনএআই সম্প্রতি এক বিশাল মাইলফলক স্পর্শ করেছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মীদের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে এর বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই বিপুল মূল্যায়ন এআই প্রযুক্তির ওপর বিনিয়োগকারীদের গভীর আস্থা এবং এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার এক স্পষ্ট ইঙ্গিত। এটি কেবল ওপেনএআই-এর সাফল্যের পরিচায়ক নয়, বরং পুরো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্পের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, এআই আর কেবল গবেষণার বিষয় নয়, বরং এটি বিশ্ব অর্থনীতিতে এক শক্তিশালী চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একদিকে যেমন মানবজাতির জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবনের দুয়ার খুলছে, তেমনি এর অপব্যবহারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলছে। দ্রুতগতির এআই প্রযুক্তির উন্নতি হ্যাকারদের জন্য স্বয়ংক্রিয় সাইবার হামলার নতুন পথ খুলে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, অদূর ভবিষ্যতে দূষিত ব্যবহারকারীরা এআই ব্যবহার করে আরও অত্যাধুনিক হ্যাকিং আক্রমণ চালাতে পারে, যা সনাক্ত করা ও প্রতিরোধ করা প্রচলিত পদ্ধতির জন্য কঠিন হবে। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা এবং এআই-এর নৈতিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করা এখন অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এআই যত শক্তিশালী হচ্ছে, এর নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার বিষয়টি ততই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, যা বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিবিদ ও নীতিনির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলছে।
বৈশ্বিক প্রযুক্তি অগ্রগতির এই সময়ে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার যে লক্ষ্য সরকার নির্ধারণ করেছে, সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স এবং হার্ডওয়্যার ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। দেশের প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে রোবট তৈরি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ও হার্ডওয়্যার ব্যবস্থাপনার জন্য একাধিক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ওপেনএআই-এর মতো প্রতিষ্ঠানের সাফল্য এবং এআই-এর সাইবার ঝুঁকি— উভয়ই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বহন করে। একদিকে যেমন এআই-এর অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি ঘটানো সম্ভব, তেমনি এর সম্ভাব্য বিপদগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং কার্যকর সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলাও অপরিহার্য। দেশের প্রযুক্তি খাতকে এই বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।