চট্টগ্রামে ভবন হেলে পড়া: ঢাকার উচ্চ ভূমিকম্প ঝুঁকি ও দুর্বল প্রস্তুতি

চট্টগ্রামে ভবন হেলে পড়া: ঢাকার উচ্চ ভূমিকম্প ঝুঁকি ও দুর্বল প্রস্তুতি

চট্টগ্রামে ভবন হেলে পড়া ও তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি

ভূমিকম্পের রেশ কাটতে না কাটতেই চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ এলাকায় একটি ছয়তলা ভবন হেলে পড়ার খবর জনমনে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ভবনটি পাশের একটি কাঠামোর ওপর বিপজ্জনকভাবে হেলে পড়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই ঘটনা আবারও বাংলাদেশের, বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর ভূমিকম্প ঝুঁকির বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমন ঘটনা দুর্বল ভবন নির্মাণ ও যথাযথ তদারকির অভাবকেই স্পষ্ট করে। ভবন হেলে পড়ার এই ঘটনা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা এবং অপরিকল্পিত নগরায়নের পরিণতি সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে, যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ঢাকার উচ্চ ভূমিকম্প ঝুঁকি: কারণ ও উদ্বেগ

চট্টগ্রামের এই ঘটনা ঢাকার জন্য এক অশনি সংকেত, কারণ রাজধানী ঢাকাও মারাত্মক ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন যে, ঢাকা একটি বড় ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প ঢাকাবাসীর মনে নতুন করে সেই ভয় জাগিয়ে তুলেছে। যুগান্তরসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ঢাকার নিচে থাকা বিপজ্জনক অদৃশ্য চ্যুতিগুলো, দুর্বল ভবন নির্মাণ এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি এই ঝুঁকির প্রধান কারণ। অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং ভবন নির্মাণ বিধিমালা লঙ্ঘনের কারণে শহরের অধিকাংশ ভবনই ভূমিকম্প সহনীয় নয়, যা যেকোনো মুহূর্তে বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।

দুর্বল অবকাঠামো ও প্রস্তুতিহীনতার ভয়াবহতা

ঢাকার এই উচ্চ ঝুঁকি কেবল ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে নয়, বরং দুর্বল অবকাঠামো এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতিহীনতার কারণেও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরের অসংখ্য পুরনো ও নতুন ভবন যথাযথ নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ না করেই তৈরি হয়েছে। একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে এসব ভবনের অধিকাংশই ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে। প্রথম আলোর বিভিন্ন প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব, উদ্ধার তৎপরতার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের স্বল্পতা এবং প্রশিক্ষিত জনবলের ঘাটতি ঢাকার প্রস্তুতিহীনতার স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। পাশাপাশি, ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

করণীয় ও ভবিষ্যতের প্রস্তুতি

ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় অবিলম্বে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। সরকারের উচিত কঠোরভাবে ভবন নির্মাণ বিধিমালা প্রয়োগ করা, পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে সেগুলোর সংস্কার বা ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া। একই সঙ্গে, নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমিকম্প সহনশীল নকশা ও মানসম্মত উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জাম সংগ্রহ এবং প্রশিক্ষিত দল প্রস্তুত রাখতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং ভূমিকম্পের সময় করণীয় সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে শিক্ষিত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলোর আধুনিকীকরণ এবং গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন, যাতে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে আগাম তথ্য পাওয়া যায় এবং প্রস্তুতি আরও জোরদার করা যায়।

Share this article:

সর্বশেষ খবর