ইউরোপে উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে লিবিয়া পাড়ি জমানো মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার তিন যুবককে মাফিয়ারা গুলি করে হত্যা করেছে। অবৈধ পথে ইতালিতে প্রবেশের চেষ্টাকালে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নিহতরা হলেন দক্ষিণ ভাওয়াল গ্রামের রনি, রাজিব ও সুজন। তাদের পরিবারে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া এবং এলাকায় চলছে শোকের মাতম। এই ঘটনা আবারও অবৈধ অভিবাসনের ভয়াবহ পরিণতি এবং মানব পাচারকারীদের নিষ্ঠুরতার চিত্র তুলে ধরেছে। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারান, যা এক আন্তর্জাতিক মানবিক সংকট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই ঘটনা বাংলাদেশিদের মধ্যে অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ঝুঁকি সম্পর্কে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
জীবিকার সন্ধানে অবৈধ পথে বিদেশ পাড়ি জমানো বাংলাদেশিদের জন্য এক নিত্যদিনের মর্মান্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। মানব পাচারকারীরা লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে সহজ-সরল যুবকদের ফাঁদে ফেলে। এরপর লিবিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে তাদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করে, যা প্রায়শই সহিংসতায় রূপ নেয়। মাদারীপুরের এই যুবকদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। দালালচক্রের মাধ্যমে তারা লিবিয়া পৌঁছালেও ইতালিতে যাওয়ার পথে মাফিয়াদের হাতে প্রাণ হারান। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে এমন মানব পাচারকারী চক্রের ভয়াবহ নেটওয়ার্কের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে অসংখ্য পরিবার তাদের সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসে এবং প্রিয়জনদের হারায়। এই ধরনের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানব পাচার রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় নিহত যুবকদের পরিবারে এখন মাতম চলছে। স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। নিহতদের পরিবারগুলো অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং দালালচক্রের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তারা সরকারের কাছে সন্তানদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানিয়েছে, যাতে অন্তত শেষবারের মতো প্রিয়জনদের মুখ দেখতে পারে। বাংলাদেশ সরকার অবৈধ অভিবাসন রোধে নানা পদক্ষেপ নিলেও মানব পাচারকারীরা নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে চলেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং লিবীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার বিস্তারিত জানার ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে যুগান্তর জানিয়েছে। সরকার দেশের যুবকদের নিরাপদ ও বৈধ পথে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে।