অনার, বিশ্বখ্যাত স্মার্টফোন ব্র্যান্ড, বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে তাদের স্মার্টফোন উৎপাদন শুরু করতে চলেছে। স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডের সাথে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ দেশের প্রযুক্তি খাতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের গ্রাহকরা হাতের নাগালে আরও সহজে অনার ব্র্যান্ডের মানসম্পন্ন স্মার্টফোন পাবেন। এই চুক্তি দেশের ইলেকট্রনিক শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং স্থানীয় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন শুরু হওয়ায় অনার স্মার্টফোনগুলি "বাংলাদেশে তৈরি" চিহ্ন নিয়ে বাজারে আসবে, যা দেশের জন্য একটি গর্বের বিষয়।
অনারের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বহুবিধ ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রথমত, এটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, যা দেশের বেকারত্ব কমাতে সাহায্য করবে। দ্বিতীয়ত, স্থানীয়ভাবে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায়, গ্রাহকরা তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে অনার স্মার্টফোন কেনার সুযোগ পাবেন। দ্য ডেইলি স্টার-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ধরনের বিনিয়োগ দেশের প্রযুক্তিগত অবকাঠামোকে শক্তিশালী করে এবং স্থানীয় প্রকৌশলীদের জন্য নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করে। এটি কেবল স্মার্টফোন উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং আনুষঙ্গিক শিল্পগুলোকেও উৎসাহিত করবে, যেমন মোড়কজাতকরণ এবং সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থা।
বাংলাদেশে অনারের স্থানীয় উৎপাদন শুরু হওয়ায় স্মার্টফোন বাজারে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে। বর্তমানে দেশে স্যামসাং, শাওমি, রিয়েলমি-এর মতো ব্র্যান্ডগুলো স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করছে। অনারের এই সংযোজন গ্রাহকদের জন্য আরও বেশি বিকল্প তৈরি করবে এবং ব্র্যান্ডগুলোকে গুণগত মান ও মূল্য উভয় দিক থেকেই সেরা পণ্য দিতে উৎসাহিত করবে। গ্রাহকরা এখন তাদের পছন্দের অনার মডেলগুলি দ্রুত এবং সহজে পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এটি বিক্রয়োত্তর সেবার মান উন্নত করতেও ভূমিকা রাখবে, কারণ স্থানীয় পরিবেশক এবং সেবা কেন্দ্রগুলো আরও সক্রিয় হবে। এই পদক্ষেপ দেশের প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং বিশাল ভোক্তা বাজার বৈশ্বিক প্রযুক্তি ব্র্যান্ডগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অনারের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের স্থানীয় উৎপাদনে আসা এই প্রবণতারই একটি অংশ। সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বিনিয়োগবান্ধব নীতি এবং ভ্যাট সুবিধা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনে উৎসাহিত করছে। এটি কেবল স্মার্টফোন নয়, অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই ধরনের উদ্যোগ দেশের "ডিজিটাল বাংলাদেশ" এবং "স্মার্ট বাংলাদেশ" স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হবে, যেখানে প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতা একটি মূল লক্ষ্য। যুগান্তর-এর এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খলে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠছে।