চলতি অর্থবছরের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স নতুন রেকর্ড গড়েছে। এই এক মাসে দেশে মোট ২.৮৮ শত কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ৩১.৩৪ শতাংশ বেশি। এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে। মানবজমিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি গত দুই দশকের মধ্যে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স বৃদ্ধির রেকর্ড। এই ইতিবাচক ধারা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করতে এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
দীর্ঘদিন ধরে চলমান বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স প্রবাহ এই সংকট মোকাবিলায় অনেকটাই স্বস্তি এনেছে। বৈদেশিক মুদ্রার এই বাড়তি সরবরাহ স্থানীয় মুদ্রার মান স্থিতিশীল রাখতে এবং আমদানি ব্যয় মেটাতে সহায়ক হচ্ছে। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এই রেমিটেন্স প্রবাহের কারণে দেশের অর্থনীতি এখন গত বছরের গণ-আন্দোলনের সময় বা তার পূর্বের অবস্থার চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। এটি সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রতি জনগণের আস্থাও বাড়াতে সহায়তা করছে, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য একটি ইতিবাচক দিক।
রেমিটেন্স প্রবাহে এই রেকর্ড গতির পেছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজারের সম্প্রসারণ বাংলাদেশি প্রবাসীদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। একইসাথে, সরকার কর্তৃক রেমিটেন্স প্রেরণে প্রণোদনা প্রদান এবং অবৈধ হুন্ডি পথ পরিহার করে ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করাও এই প্রবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। যুগান্তরের অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর আরও বেশি আস্থা রাখছেন এবং এর ফলে বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে একটি টেকসই ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স প্রবাহ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি শুভ লক্ষণ হলেও, এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা একটি চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের অস্থিরতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি রেমিটেন্স প্রবাহে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই ধারাকে টেকসই করতে হলে নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান, দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং রেমিটেন্স প্রেরণে আরও সহজ ও নিরাপদ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। সরকারের উচিত প্রবাসীদের কল্যাণে আরও বেশি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে তারা দেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান অব্যাহত রাখতে পারেন এবং বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারে।