প্রায় বারো বছর ধরে নিখোঁজ সোহেলের পরিবারের অপেক্ষা, গুম কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে হতাশা

প্রায় বারো বছর ধরে নিখোঁজ সোহেলের পরিবারের অপেক্ষা, গুম কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে হতাশা

ঢাকার বংশালের ছাত্রদল নেতা মাহফুজুর রহমান সোহেল প্রায় বারো বছর ধরে নিখোঁজ। তার পরিবার, বিশেষ করে স্ত্রী শিল্পী রহমান, দীর্ঘ সময় ধরে তার ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনে যাচ্ছেন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে শাহবাগ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সোহেলকে তুলে নেওয়ার পর থেকে তার কোনো খবর মেলেনি। এই দীর্ঘ অপেক্ষা, বিশেষ করে সম্প্রতি গুম কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর, সোহেলের পরিবারের মধ্যে নতুন হতাশা তৈরি করেছে।


শিল্পী রহমান তার স্বামীর সন্ধানে এখনও গভীর আশা পোষণ করলেও, গত এক যুগের দুঃসহ অপেক্ষায় তার মনোবল ভেঙে পড়েছে। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এখন আমরা পাবো না কেন? আর কত অপেক্ষা করলে আমার স্বামীর খোঁজ পাবো?” শিল্পী রহমানের মতো আরও অনেক পরিবার রয়েছে যারা দীর্ঘ সময় ধরে নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে দিন গুনছে।


নিখোঁজ আল আমিনের পরিবারের মতো, সোহেলের পরিবারও গুমের শিকার অনেকের বিষয়ে সরকারের গুম কমিশনের প্রতিবেদনে কিছু তথ্য পাওয়ার আশা করেছিল। তবে কমিশনের প্রতিবেদনটিতে কোনো নিখোঁজ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি, বরং নির্যাতন এবং হত্যার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গুম কমিশনের এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনেক পরিবার আশাবাদী হয়েছিল, কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়ায় তারা আবার হতাশ হয়ে পড়েছেন।


আল আমিনের পরিবারের সদস্য রুহুল আমিন বলেন, “গুম কমিশনে চিঠি পাঠানোর পর তারা বলেছিল ১৫ দিন সময় লাগবে। কিন্তু এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি। যদি মারা যায়, আমাদের লাশ দেখাক। কবরস্থান দেখাক। আমাদের ভাইয়ের কবর কোথায়, তা দেখতে চাই।” এ ধরনের দাবী শুধু আল আমিনের পরিবারের নয়, আরও অনেক পরিবারের, যারা নিখোঁজ তাদের স্বজনদের খোঁজে এখনও অপেক্ষা করছে।


গুম কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে নিখোঁজ ৭৩ শতাংশ ভিকটিমের খোঁজ মিলেছে। তবে এখনও ২৭ শতাংশ নিখোঁজ ব্যক্তির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন জানিয়েছেন যে, তারা তদন্ত অব্যাহত রেখেছেন এবং এখনও গুমের শিকার অন্তত ২০০ মানুষের কোনো হদিস নেই।


তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি তাদের অন্ততপক্ষে শেষ অবস্থান জানার জন্য। তারা বেঁচে আছেন না তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে বা ভারতে পাঠানো হয়েছে, আমরা এই শেষ অবস্থান সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি। এটা জানানো খুব কঠিন, তবে কিছু কেইস আমরা স্পেসিফিকভাবে অনুসন্ধান করছি।”


এদিকে, ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সদস্য সানজিদা ইসলাম জানিয়েছেন, গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা গুম কমিশনের প্রতিবেদন পরেও সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা যে প্রতিবেদন আশা করেছিলাম, সেটা পুরোপুরি হয়নি। পরিবারগুলো আরও তথ্য এবং নির্দিষ্ট পরিণতি জানতে চায়।” তিনি আরও বলেন, “আমরা কোনো প্রতিশ্রুতি ছাড়া তাদেরকে কিছু বলতে পারছি না। আমাদের দাবি স্পষ্ট, আমাদের স্বজনদের সঙ্গে কী ঘটেছে, তা জানানো হোক।”


গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের দাবি, সরকার পরিবর্তনের পর গোপন সেলগুলোর তথ্য প্রকাশ্যে আনা উচিত এবং তথ্য প্রমাণসহ দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা দরকার। ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সদস্যরা আরও বলেন, তারা গত ১২ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে, কিন্তু এখনও একই দাবিতে তারা প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছেন।


গুম কমিশন নিখোঁজদের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে আরও সময় চাচ্ছে। নূর খান লিটন বলেন, “এই প্রক্রিয়াটি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ, কারণ কোনো কর্মকর্তাই স্বীকার করবে না যে, তারা নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে গুম করেছে বা হত্যার সাথে জড়িত।” তবে তিনি আশাবাদী যে, কিছু নির্দিষ্ট কেইসে তারা সফল হবেন।


গুমের শিকার পরিবারের জন্য এটি একটি দীর্ঘ এবং কষ্টকর পথ। তাদের আশা, একদিন তাদের প্রিয়জনদের ফিরে আসার খবর পাবে। তবে সেসব পরিবারজন্য এখনো দীর্ঘ অপেক্ষা এবং সংগ্রাম বাকি।ছেন।

প্রায় বারো বছর ধরে নিখোঁজ সোহেলের পরিবারের অপেক্ষা, গুম কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে হতাশা

প্রায় বারো বছর ধরে নিখোঁজ সোহেলের পরিবারের অপেক্ষা, গুম কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে হতাশা

Share this article:

সর্বাধিক পঠিত

সর্বশেষ খবর