সম্প্রতি প্রকাশিত গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স (GII) ২০২৫-এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬তম, যা দেশের উদ্ভাবন খাতে স্থবিরতা নির্দেশ করছে। বিশ্বের ১৩৯টি অর্থনীতির মধ্যে এই অবস্থান গত কয়েক বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখাতে পারেনি। এই সূচকটি একটি দেশের উদ্ভাবনী পরিবেশ, গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D), প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষমতা পরিমাপ করে। বাংলাদেশের এই স্থবির অবস্থান দেশের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য পূরণে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকা মানে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
উদ্ভাবন সূচকে বাংলাদেশের স্থবিরতার পেছনে বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করা যায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো গবেষণা ও উন্নয়নে (R&D) অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ। দেশের জিডিপির তুলনায় গবেষণা খাতে বরাদ্দ অত্যন্ত কম, যা নতুন ধারণা ও প্রযুক্তির বিকাশে প্রধান বাধা। এছাড়াও, শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের অভাবও একটি বড় সমস্যা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উদ্ভাবনী গবেষণা হলেও শিল্পক্ষেত্রে এর প্রয়োগের সুযোগ সীমিত। দক্ষ জনবলের অভাব, বিশেষ করে উচ্চপ্রযুক্তি খাতে, উদ্ভাবনী ইকোসিস্টেমকে দুর্বল করে তুলছে। নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ধীরগতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের জন্য প্রয়োজনীয় অনুকূল পরিবেশের অভাবও এই স্থবিরতার জন্য দায়ী। ফলস্বরূপ, নতুন উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলো পর্যাপ্ত সমর্থন ও অর্থায়ন পায় না, যা তাদের টিকে থাকতে বা প্রসারিত হতে বাধা দেয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ এগিয়ে চলেছে, সেখানে উদ্ভাবন একটি অপরিহার্য স্তম্ভ। উদ্ভাবনী সক্ষমতা ছাড়া কেবল প্রযুক্তি ব্যবহারকারী হিসেবে থাকা সম্ভব, কিন্তু প্রযুক্তির নেতৃত্ব দেওয়া বা নতুন কিছু তৈরি করা সম্ভব নয়। জিআইআই ২০২৫-এর ফলাফল বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে। এই স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে হলে সরকারকে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে কার্যকর সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে এবং একটি শক্তিশালী স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। তরুণ উদ্ভাবকদের উৎসাহিত করতে পর্যাপ্ত অর্থায়ন, মেন্টরশিপ এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ তৈরি করা জরুরি। উদ্ভাবনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনা এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।