মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডি (USAID) কার্যক্রমের প্রায় সমস্ত তহবিল স্থগিত করার আকস্মিক সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক বিস্ময় ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চলমান বিভিন্ন মানবিক ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। তহবিলের এই স্থগিতাদেশের ফলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করা সংস্থাগুলো কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে প্রশাসনের সুনির্দিষ্ট কারণ বা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনও সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট নয়, তবে এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিশ্বজুড়ে উন্নয়ন কার্যক্রমে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ইউএসএআইডি তহবিল স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের এনজিও (NGO) খাতে গভীর সংকট তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অসংখ্য বেসরকারি সংস্থা তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইউএসএআইডি-এর অনুদানের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে গ্রামীণ উন্নয়ন, নারী ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবেশ সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে কর্মরত এনজিওগুলো এই তহবিল স্থগিতাদেশের ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রথম আলো এবং মানবজমিনের মতো প্রধান বাংলাদেশী সংবাদপত্রগুলো এই তহবিল স্থগিতাদেশের ফলে বাংলাদেশের এনজিওগুলির মধ্যে সৃষ্ট উদ্বেগ এবং সম্ভাব্য 'অর্থায়ন সংকট' নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই পরিস্থিতির কারণে লক্ষ লক্ষ সুবিধাভোগী, যারা এই এনজিওগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন সহায়তা পান, তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ইউএসএআইডি তহবিল স্থগিতের কারণে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে সরকারি সেবা পৌঁছানো কঠিন, সেখানে এনজিওগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই তহবিল বন্ধ হয়ে গেলে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি, মাতৃস্বাস্থ্য সেবা, মৌলিক শিক্ষা কার্যক্রম এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রকল্পগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। দ্য ডেইলি স্টার-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলির ধারাবাহিকতা রক্ষা করাকে আরও কঠিন করে তুলবে। এর ফলে দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান আরও অবনতির দিকে যেতে পারে। এই সংকট মোকাবিলায় বিকল্প অর্থায়নের উৎস খুঁজে বের করা এবং সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তার হাত বাড়ানো অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।